পুতিনের দলের নাম কি?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দলের নাম কি ইউনাইটেড রাশিয়া (United Russia)? প্রশ্নটির উত্তর হ্যাঁ। এটি রাশিয়ার প্রধান রাজনৈতিক দল এবং পুতিনের ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলটি দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়ার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ভ্লাদিমির পুতিনের দলের নাম কি: তার দলের নাম ইউনাইটেড রাশিয়া। তিনি ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৯১ সালে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের তৎকালীন মেয়র আনাতোলি সাবচাকের প্রশাসনে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর আগে পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি (KGB) তে কর্মরত ছিলেন।

পুতিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মূল উত্থান ঘটে ১৯৯৯ সালে, যখন তিনি রাশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বোরিস ইয়েলতসিনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইয়েলতসিনের পদত্যাগের পর পুতিন ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন।

ইউনাইটেড রাশিয়া (United Russia) হচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়ার অন্যতম প্রধান এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। দলটি ২০০১ সালে গঠিত হয়েছিল এবং এর মূল লক্ষ্য হলো রাশিয়ার ঐক্য, স্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই দলের প্রধান আদর্শিক ভিত্তি হলো জাতীয়তাবাদ, রক্ষণশীলতা, এবং সামাজিক ঐক্য।

পুতিনের দলের কিছু মূল বৈশিষ্ট্য:

  1. নেতৃত্ব ও ক্ষমতা: দলটি দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করছে। পুতিনের অধীনে, দলটি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। যদিও পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বদা দলের নেতা হিসেবে কাজ করেন না, তবে তার প্রভাব সুস্পষ্ট।
  2. অর্থনৈতিক নীতি: ইউনাইটেড রাশিয়া সাধারণত রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের পক্ষপাতী। দলের নীতি হলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিকাশ করা। বিশেষ করে জ্বালানি খাতের উপর।
  3. রাষ্ট্রের ভূমিকা: দলটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থন করে, যা রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে মনে করে।
  4. নির্বাচনী সাফল্য: ২০০৩ সাল থেকে, ইউনাইটেড রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে রাশিয়ার সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে আসছে এবং এটি দেশটির সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ন্ত্রণ করছে।
  5. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: দলটি পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিকে অনুসরণ করে। যা সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে একটি সংযত এবং কঠোর সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। দলটি রাশিয়ার সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করার নীতিতে বিশ্বাস করে।

ইউনাইটেড রাশিয়া দেশজুড়ে বেশ শক্তিশালী হলেও সমালোচনাও রয়েছে। অনেক সমালোচক দলটিকে অতি-নিয়ন্ত্রণমূলক এবং গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিহীন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে দলটি সাধারণত তার সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং দেশের অনেক অঞ্চলে প্রভাবশালী।

ভ্লাদিমির পুতিন হলেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ৭ অক্টোবর, ১৯৫২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। পুতিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯১ সালে, যখন তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের মেয়র আনাতোলি সাবচাকের উপদেষ্টা হন।

মোদী পুতিন সম্পর্ক কেমন?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক বেশ শক্তিশালী ও জটিল। তাদের সম্পর্কের কিছু মূল দিক হলো:

  1. অর্থনৈতিক সম্পর্ক: ভারত ও রাশিয়া উভয়ের মধ্যে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়া ভারতকে সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্র, এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও গুরুত্বপূর্ণ।
  2. সামরিক সহযোগিতা: ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা দীর্ঘদিনের। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে মিসাইল, যুদ্ধবিমান, সাবমেরিনসহ বিভিন্ন সামরিক প্রযুক্তি অর্জন করেছে।
  3. ভূরাজনৈতিক সমন্বয়: উভয় দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে কিছু পরস্পর সমন্বয় রয়েছে। তারা সাধারণত দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার বিষয়ে একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে।
  4. মুখোমুখি আলোচনা: মোদী ও পুতিনের মধ্যে বিভিন্ন বৈঠক ও শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনা হয়। মোদী ও পুতিনের মধ্যে উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
  5. বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন: তবে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিবর্তনের কারণে উভয় দেশের সম্পর্কও কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন, পশ্চিমা দেশের সাথে ভারত এবং রাশিয়ার সম্পর্কের মধ্যে কিছু গোপনীয়তা ও চাপ তৈরি হতে পারে।

মোটের ওপর, মোদী ও পুতিনের সম্পর্ক স্থায়ী ও সহযোগিতামূলক হলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

পুতিনের রাজনৈতিক জীবন:

ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট। তিনি প্রথমবার ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ২০০৪, ২০১২ এবং ২০১৮ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন। তার প্রেসিডেন্সির পাশাপাশি, তিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

  1. প্রধানমন্ত্রী: তিনি ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০০০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
  2. মেয়াদ: পুতিন প্রথম দফায় ২০০০-২০০৮ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরে তিনি ২০০৮-২০১২ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন, এবং ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
  3. রাজনৈতিক প্রভাব: তার নেতৃত্বে রাশিয়া শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন এবং রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির দিকে এগিয়ে গেছে।
  4. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: পুতিনের প্রশাসন পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কঠোর সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিষয়ে তার কর্মকাণ্ড অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন:

“পুতিন” নামের অর্থ রাশিয়ান ভাষায় সাধারণত “ছোট্ট” বা “ছোট” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। রাশিয়ান ভাষার একটি সাধারণ উপসর্গ “পুত” (put) এর অর্থও “পথ” বা “পথের নির্দেশ”। নামটি মূলত একটি পদবী হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পুতিন পরিবারের সদস্যদের নামের মধ্যে এটি অত্যন্ত পরিচিত।

পুতিন নামটি রাশিয়ায় সাধারণত পদবী হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং এটি বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে যুক্ত হতে পারে। ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষেত্রে, এটি তার পরিবারের নাম।

ভ্লাদিমির পুতিন অর্থোডক্স খ্রিস্টান। তিনি রাশিয়ার প্রথাগত ধর্ম হিসেবে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। পুতিন বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও রুশ অর্থোডক্স চার্চের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তিনি দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

পুতিনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রচুর গোপনীয়তা রয়েছে। তিনি একবার বিবাহিত ছিলেন এবং তার দুই কন্যা রয়েছে।

ভ্লাদিমির পুতিনের দুই কন্যা হলেন:

  1. মারিয়া ভ্লাদিমিরোভনা পুতিনা (Maria Vladimirovna Putina):
    • জন্ম: ১৮ এপ্রিল, ১৯৮৫
    • শিক্ষা: তিনি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি থেকে মেডিসিনের ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং বর্তমানে একজন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন।
    • ব্যক্তিগত জীবন: মারিয়া খুব কমই জনসমক্ষে আসেন এবং তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক গোপনীয়তা রয়েছে।
  2. ক্যাটেরিনা তিখোনোভা (Katerina Tikhonova):
    • জন্ম: ৩ আগস্ট, ১৯৮৬
    • শিক্ষা: তিনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃত্য ও গণিতের শাখায় উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেছেন।
    • কর্মজীবন: ক্যাটেরিনা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক প্রকল্পে জড়িত রয়েছেন এবং তিনি একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবেও পরিচিত।

দুই কন্যার জীবন নিয়ে পুতিন সাধারণত খুব কম তথ্য প্রকাশ করেন, এবং তারা সাধারণত গণমাধ্যম থেকে দূরে থাকেন।

ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিতর্কিত এবং প্রভাবশালী চরিত্র, যার কর্মকাণ্ড বিশ্বজুড়ে অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

পুতিনের দলের নামের তথ্য সূত্রঃ

পুতিনের দলের ‍নাম কি?- উইকিপিডিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক দলকোনটি?satt academy

ইউনাইটেড রাশিয়া | রাজনৈতিক দল, রাশিয়া | ব্রিটানিকাBritannica

পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন পুতিন-BBC

পুতিনের দলের ‍নাম কি?- উইকিপিডিয়া

আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন: FacebookTwitterInstagramYoutube

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।